চেতনায় একাত্তর প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ প্রায় শত বছর যাবত কাটপট্টি খেয়া ঘাটটি যাত্রীদের পারাপার করে আসছে, মুন্সীগঞ্জ জেলার উত্তর পূর্বাংশের মানুষের নারায়ণগঞ্জসহ দেশ এর অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের মুল মাধ্যম ছিল কাটপট্টি লঞ্চঘাটের পর এই কাটপট্টি গোদারাঘাট, ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ পারে মুন্সীগঞ্জ অংশে কাটপট্টি গুদারা ঘাট আর নদীর উত্তর পার্শ্বে নারায়ণগঞ্জ অংশে চর সৈয়দপুর গুদারাঘাট, একসময় চর সৈয়দপুর অংশে কোন ঘাট ছিল না, শুধু মাত্র কাটপট্টি অংশে গুদারা ঘাট ছিল এবং এই ঘাট থেকেই যাত্রি প্রতি গুদারার ভাড়া বাবদ এক আনা, দু-আনা টোল আদায় করা হতো, সেই থেকেই ঘাটটির নামকরন করা হয় কাটপট্টি গুদারা ঘাট। কারন মুন্সীগঞ্জ জেলার কাটপট্টির সংলগ্ন কমলাঘাট বন্দর, রিকাবিবাজার, বিনোদপুর এলাকা হল ব্যাবসায়িক কেন্দ্র আর নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর এলাকা ছিল চর এলাকা সঙ্গত কারনেই এই এলাকায় ঘাট ছিল না, চরের যেই কোন নিরাপদ স্থানেই যাত্রীদের নামানো হত, এখন আর সেই অবস্থা নেই সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটছে, চর সৈয়দপুর এলাকায় বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, দোকান মার্কেট স্থাপিত হয়েছে, তাই চর সৈয়দপুরে গুদারা ঘাট বসানো হয়েছে, ঘাট ইজারাধার তার ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে যেই পারে ঘাট বসিয়ে বেশী টোল আদায় করা যায় সেই পার থেকেই টোল আদায়ের ব্যবস্থা করে থাকে, মুন্সীগঞ্জ এলাকা থেকে যাত্রীর প্রায় ৭৫% জন লোক খেয়া পারাপার হয়ে থাকে, তাই ইজারাদার নারায়ণগঞ্জ এলাকার চর সৈয়দপুর ঘাট থেকেই টোল আদায় করে আসছে।
তবে কাটপট্টি নামেরই ঘাটটি পরিচালনা হয়ে আসছে, একসময় ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমলে কাটপট্টি খেয়াঘাট পার হয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে লোকজন ট্রেন যোগে দেশের বিভিন্নস্থানে আসা যাওয়া করত, তখন ট্রেনই ছিল যাতায়াতের মুল অবলম্বন ।
কালের আবর্তে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ঘাটের পূর্ব পাশে ধলেশ্বরী নদীর উপর মুক্তারপুর সেতু নির্মাণ হওয়ায় মানুষ সেতু পথেই যাতায়াত করে থাকে, তবে মিরকাদিম, রামপাল, পঞ্চসার ইউনিয়নের একাংশ ও আশপাশ এলাকার লোকজন সময় ও টাকা বাঁচাতে এই খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হয়ে হয়ে আসছে।
মুন্সীগঞ্জ এলাকার লোকজনদের যেহেতু এই খেয়াঘাট পার হয়ে নারায়নগঞ্জের চর সৈয়দপুর দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাই মুন্সীগঞ্জের লোকজনদের চর সৈয়দপুর এলাকার কিছু মানুষের কাছে মানসিক ভাবে দুর্বল থাকতে হয়। এই দুর্বলতার সুযোগ দিয়ে ইজারাদার চর সৈয়দপুর এলাকা থেকেই নৌকা ভাড়া আদায় করে, ঘাটের ইজারাদাররা প্রভাবশালী হয়, প্রয়োজনে দুই এলাকার লোকজন মিলেই ঘাট ইজারা নেয়, এবং ঘাটের মুনাফা ভাগ করে নেয়, ইজারাদারগণ ঘাট ডেকে এনে কিছু লোকদের কাছে সাবলেট দেন তারা আবার দিবা আর রাত্রির দুই ভাগের টোল অগ্রিম বিক্রি করে দেন, এইভাবে ২/৩ হাত বদল হয়ে টোল আদায় করতে গিয়ে সব পক্ষই অতি মাত্রায় লাভ করতে চায় আর এই লাভের খেসারত দিতে হয় সাধারন যাত্রিদের যার অধিকাংশ মিরকাদিম, রিকাবি বাজার ও আশপাশ এলাকার শ্রমিক–কর্মচারী, খেঁটে খাওয়া সাধারন মানুষ, ফেরিওয়ালা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যারা বেশি যাতায়াত করে থাকে,
তাদের উপর সরকারী নিদ্ধারিত টোলের বাড়তি টোল চাপিয়ে দেওয়া হয়, দিনের বেলা খেয়াপারের জন্য ১০ টাকা, সন্ধার পর ২০ টাকা, রাত ১২ টার পর যা আদায় করা যায়, নুন্যতম যাত্রী একজন হলেও টোল ১০০ টাকা আর মাঝির জন্য ২০ টাকা মোট ১২০ টাকা দিলে তবেই খেয়াপার হওয়া যাবে, আরও দুঃখজনক হল কোন যাত্রির সাথে ২০/৩০ কে.জি-র কোন পোটলা থাকলে তাদের কাছ থেকে ২০/৫০/১০০ টাকা আদায় করা হয়,এই বিষয় কেহ প্রতিবাদ করিলে তাকে ইজারাদার নিয়োজিত লোকজন অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে, অনেক যাত্রীকে মারধোর করা হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করে থাকে, আর হুমকি ধমকি নিত্যদিনের ব্যাপার।