
শরমিতা লায়লা প্রমিঃ বাঘ মামা, এই বাঘ মামাকে নিয়ে আমরা নানা-নানি, দাদা-দাদির কাছে কতনা গল্প শুনেছি, যদি দুষ্টুমি করতাম, না ঘুমাতাম, তখন আমাদের বাঘের গল্প বলে ঘুম পারাত, তেমনি একটি বাঘের গল্প, পরবর্তীতে আমরা পাঠ্য বইতে পড়েছি, আপনারাও পড়ে থাকবেন। গল্পটি এই রকম এক কৃষকের এক দুষ্টু প্রকৃতির ছেলে প্রতিদিন বনের ধারে গরু চড়াতে যেত, ছেলেটির মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো হঠাৎ করে চিল্লাইতে লাগলো বাঘ আসছে বাঘ আসছে, ছেলেটির চিৎকার শুনে গ্রামবাসীরা দৌড়ে আসলো , এসে দেখল, কিসের বাঘ, ছেলেটি খিল খিল করে হাসছে, লোকজন বিরক্ত হয়ে চলে গেল, এইভাবে ২/৩ দিন ছেলেটি লোকজনকে হয়রানী করলো, একদিন সত্যি সত্যিই বাঘ আসলো ছেলেটি দৌড়াতে দৌড়াতে চিল্লাইতে লাগলো কিন্তু সেইদিন আর কেহ ছেলেটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসলো না, সবাই মনে করলো রোজগার মতো ছেলেটি তামাসা করছে, সেই দিন সত্যি বাঘ এসে ছেলেটিকে খেয়ে নিল। গল্পটির মর্ম হল, কখন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষের সাথে ছলনা করিও না, পরবর্তীতে তোমার বিপদের সময় সত্যি কথাকেও কেহ বিশ্বাস করবে না ।

আমাদের সমাজে এখন চলছে মিথ্যার রাজত্ব, এই সুযোগে চাটুকার আর সুবিধাবাদীরা সমাজে বহাল তবিলতে ভাল্ভাবেই অবস্থান করে নিয়েছে, কথায় বলে না সত্যি কথায় কর্তা বেজার, তাই কর্তাকে কেহ বেজার করতে চায় না, রাজনীতি, সামাজিক, প্রশাসনিক সর্ব ক্ষেত্রে তেল মারামারিতে যিনি মুন্সিয়ানা দেখাতে পারবেন, কর্তা ব্যাক্তি তাকেই কাছে টানবেন কর্তার তুষ্টি মানে রাতারাতি সুবিধা আদায় করে নেওয়া। আজকাল আর মামা ভাগ্নে–শালা সম্বন্ধীদের একক আধিপত্য না তাদের অংশে ভাগ বসিয়েছে তেল মালিশ অয়ালা চাটুকার আর দালালরা যাদের নংপুরুষ বললে বেশি বলা হবে না । এই নংপুরুষরা বংশ বিস্তার না করতে পারলেও সর্ব ক্ষেত্রে অপরাধ বিস্তারে পারদর্শিতা দেখায়। তাই আজ কাল আর কে সৈয়দ বংশের? কে ভুঁইয়া বংশের? কে ব্রাহ্মণ ? কে ক্ষত্রীয় ? এই সব দেখার সময় কোথায়, টাকা ? টাকা আছে তোমার জন্য সব ফাকা- ফকফকা- পদ পদবী , মর্যাদা, নেতা, গুরু, চেয়ারম্যান, মেয়র, এম।পি কি চাই, আর কি নাই, সবই পাই, এই সবই টাকার গুন, তাই সবাই টাকার পিছে ছুটছে, টাকার জন্য সব করতে পারি পায়ে চুমা, মাথায় সুগন্ধি তেল মালিশ এমনকি শালোয়ার পায়জামা খুলতেও রাজি —-যেমন করলো জামালপুরের ডি সি সাব। তবে ডাকাইয়্যা ছবির পুরানো দিনের গান মনে পরে গেল—টাকা তুমি দেখতে গোল কর যত গণ্ডঘোল, না ভাই খান জয়নুল এখন আর গোল কাচা টাকার কদর নাই, এক কাপ চা পান করতে দশ টাকার কড় কড়ে নোট লাগে। যদিও থাকে ফকির মিছকিনদের দিয়ে দেই।
তাই চামার মেথর কসাই জাউল্ল্যা, চোর লুচ্চা গুন্ডা বদমাইশ বেশ্যা, সবই ব্যবসা, দেখার কিছু নাই আছে নাকি পাঁচ তালা বাড়ি, মারসিডিস গাড়ি আর রাজনীতিতে পোক্ত অবস্থান, তাহলেই আমি রাজি, মেয়ের মা-ও খুশি

- ইত্যাদি।
আজকাল কাজির অফিসের ভীর একটু বেড়েছে, বিয়ে আর টিকছে না, অনেকে টাকার জোরে কাবিনের টাকা পরিশোধ করে বৌ বিদায় করছে।
এখন আর কেহ বলে না বা বলতে লজ্জা পায় জাতের মেয়ে কালো ভাল , নদির জল ঘোলা ভাল – জাত আর অজাত যেময় টাকার কাছে ছিন্ন ভিন্ন কয়ে গেছে তেমনি নদির জলে কল কারখানার ময়লা আবর্জনা আর শহরের পয়ঃময়লা এসে পড়ছে নদিতে, নদিতে আর জল নেই আছে দুর্গন্ধময় রোগের জীবাণুতে ঠাসা, এখন মিয়া বাড়ির ছেলেটা কাজ করে জাউল্ল্যা জানু মিয়ার আরতে, লক্ষ্মী ব্রাহ্মণের মেয়েটা পড়ায় নিমাই সুত্রধরের ছেলেটাকে, আমাদের সামাজিক ব্যাবস্থার প্রথা নিয়ম ঐতিয্য বিলিনের শেষ প্রান্তে। অনেক কিছুই আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে, যেমন উজাড় হয়েছে বন-জোপ-ঝাঁর, গাছ গাছারি হারিয়ে গেছে, যেখানে বিচরন করত নানা ধরনের পাখ পাখালি, আর বন বিড়াল, বেজি, সাপ,বানর, শিয়াল নানা ধরনের জীবজন্ত্রু আর মেছু বাঘ, চিতা বাঘেরও দেখা মিলত, বেশি দিন নয় শত বৎসর পূর্বে এই সব জীবজন্তু অবাধ বিচরন করত, আমরা যখন ছোট ছিলাম ৫০/৬০ বছর আগে শিয়াল আর মেছু বাঘে খোয়ার থেকে হাঁস মুরগী ধরে নিয়ে যেত, ২০/৩০ বছর পূর্বেও গ্রাম ও চর এলাকায় মেছু বাঘ ধরার বা মেরে ফেলার খবর সংবাদ পত্রে প্রকাশ পেয়েছে।

এই ধরনেরই দুইটি মেছু বাঘ গত শনিবার ২৪শে আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলাধিন লৌহজং উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়নের ফুলকুঁচি গ্রামে দেখা যাওয়ার খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার পেয়েছে, মেছু বাঘ সাধারনত নদীর ধারে জোপজঙ্গলে বাস করে , এই মেছু বাঘকে নিরীহ প্রাণী বলা যেতে পারে, শেয়ালের মতই আচরণ করে থাকে, মানুষকে ভয় পেলে কামড়াতে পারে, মেরে ফেলার ঘটনা কমই জানা যায়।
যাই হোক অনেকদিন পর মুন্সীগঞ্জ এই বিরল প্রজাতির মেছু বাঘের সন্ধান পাওয়া গেল, আনন্দের সংবাদ বালা যেতে পারে তবে বাঘ বলে কথা, বাঘ নামের মধ্যেই ভয় ভয় ভাব এসে যায়, তাই এলাকাবাসী বাঘের ভয়ে মেছু বাঘ দুইটি মেরে ফেলতে পারে। তাই বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া বন্য প্রাণী বাঁচিয়ে রাখতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তড়িৎ ব্যাবস্থা নিতে হবে , যেহেতু দুইটি মেছু বাঘ দেখা গেছে তাই বাঘ আর বাঘিনী হতে পারে যাতে করে মেছে বাঘের প্রজনন বাড়ানোর মাধ্যমে প্রজম্ম বিস্তার ঘটানো সম্ভব। আসুন আমরা হারিয়ে যাওয়া প্রাণীদের সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখি।